নিউজ ডেস্কঃ মাদারীপুর শিবচর উপজেলায় কোন ফ্রিজ কিংবা কোল্ড স্টোরেজ ছাড়াই সংরক্ষণ করা হচ্ছে শাকসবজি। পচন ধরা তো দূরে থাক, ফসল কাটার পরও টানা তিন-চার দিনেরও বেশি বাড়িতেই টাটকা থাকছে কাঁচা ফসল। বিক্রি না হলেও ক্ষতির ঝুঁকি নেই। শশা, ভেন্ডি, লঙ্কা, পটল, ঝিঙ্গে, বেগুন থেকে পালং শাক পর্যন্ত সব কিছুই থাকবে একেবারে টাটকা। জমি থেকে তোলার পর তা রেখে দিতে হবে এই কুল চেম্বারে। কোনও বিদ্যুৎ শক্তি কিংবা রাসায়নিক ব্যবহার না করেই সতেজ থাকবে ফসল।
এ জিরো এনার্জির ‘কুলিং চেম্বার’তৈরী করেছেন মাদারীপুর শিবচর উপজেলার ভদ্রাসন ইউনিয়নের সেনেরচর এলাকার বাসিন্দা কৃষক সোয়াব আলী বেপারী ।
তার কৃষি জমির পাশে দেখা যায়- ইট, বালু, প্লাস্টিকের পাইপ, কটনবাট ও একটি ২৫০ লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন পানির ট্যাংক দিয়ে এই কুল চেম্বার তৈরি করা হয়েছে। যার দৈর্ঘ্য ২৭৯ দশমিক ৪ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ১১৬ দশমিক ৮৪ সেন্টিমিটার এবং উচ্চতা ৬২ দশমিক ২৩ সেন্টিমিটার। ভদ্রাসনসহ আশে-পাশের এলাকার কৃষকদের আশা দেখাচ্ছে সোয়াব আলী তৈরি করা বিশেষ ধরনের ‘কুলিং চেম্বার’। যা বিদ্যুৎ ছাড়াই সবজি সংরক্ষণ করা যায় এতে। ৮ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত এ চেম্বারে সবজি থাকে সজীব।
স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় মাত্র বিশ হাজার টাকা ব্যয়ে তৈরিও করেন কুল চেম্বারটি। এরপর থেকে সুফল পাচ্ছেন ব্যাপক। তেমন কোনো খরচ ছাড়াই এই কুল চেম্বারে একসঙ্গে ৯ থেকে ১০ মণ সবজি সংরক্ষণ করতে পারেন সোয়াব আলী।
এই কুলিং চেম্বার কীভাবে কাজ করে জানতে চাইলে সোয়াব আলী বেপারী বলেন, ‘প্রথমে ট্যাংকির মধ্যে পানি ভর্তি করে দিতে হবে। এই পানি প্লাস্টিকের পাইপের ছোট ছোট ছিদ্র দিয়ে কটনবার চুইয়ে বালির স্তরে পৌঁছবে। এতে কুলিং চেম্বারের তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস নেমে আসে। এভাবে তাপমাত্রা কমিয়ে সংরক্ষণ করা হয় বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি।এই কুলিং চেম্বারে কোনো ধরনের বিদ্যুতের প্রয়োজন না হওয়ায় নির্মাণ খরচ ছাড়া সবজি সংরক্ষণে আর কোনো খরচ করতে হয় না।’
এই যন্ত্র তৈরি প্রসঙ্গে সবজি চাষি সোয়াব আলী বলেন, আমার সবজি সংরক্ষণ করতে সমস্যা হয়। দুর্গম যোগাযোগব্যবস্থার কারণে বাজারজাতকরণেও সমস্যা হতো। এতে লোকসান গুনতে হতো। এ অবস্থায় উপজেলা কৃষি অফিসার অনুপম রায় স্যার আমাকে এই কুলিং চেম্বারের কথা বললে আমি আমার জমির পাশে এটি স্থাপন করি।
সোয়াব আলীর এই কুলিং চেম্বার দেখে খুশি উপজেলার ভদ্রাসন ইউনিয়নের কৃষক বাবুল ফকির। তিনি বলেন, ‘সোয়াব আলীর যন্ত্রটি আমি প্রথম বার দেখলাম যে বিদ্যুৎ ছাড়া যন্ত্রটি চলে। আমাদের কৃষকদের উপকার অইছে। সবজিগুলো এখন রাখা যাইবে অনেক দিন। নিজে খাই আর বাজারও বেছি, কোনো সমস্যা হবে না। আমরা চাই এ কাজটা যেন শিবচরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।’
এ ব্যাপারে শিবচর উপজেলার ভদ্রাসন ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: রফিকুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, ‘এটি হাওর এলাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখন নানা জাতের সবজি চাষ করছেন কৃষকরা। কিন্তু উৎপাদিত সবজিগুলো সংরক্ষণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন কৃষকরা। এ জিরো এনার্জি ‘কুলিং চেম্বার এ ৭ থেকে ৮ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে।’
শিবচর উপজেলা কৃষি অফিসার অনুপম রায় বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে দুর্গম যোগাযোগব্যবস্থার কারণে বাজারজাতকরণেও সমস্যা হয়। এতে লোকসান গুনতে হতো তাদের। তাই ভদ্রাসন ইউনিয়নের কৃষক সোয়াব আলীকে এ জিরো এনার্জির ‘কুলিং চেম্বার’ কথা বলি। তারপর তিনি সবজিগুলো তাপমাত্রা কমিয়ে ৭-৮ দিন সংরক্ষণ করার কুলিং চেম্বারটি স্থাপন করেন। এতে কোনও বিদ্যুৎ বা জ্বালানি কিংবা রাসায়নিক খরচ হয় না।